সিলেটে কর্মসংস্থান হাব গড়ার প্রতিশ্রুতি মুক্তাদিরের
সিলেটের নিজস্ব কোনো অর্থনীতি গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মুক্তাদির বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট টিকে আছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর। যেদিন থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছে, সেদিন থেকেই সিলেটের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত উন্মুক্ত নাগরিক সংলাপ ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মুক্তাদির বলেন, এখানে একজন ছেলে বিএ বা এমএ পাশ করলেই প্রশ্ন জাগে চাকরি করবে কোথায়? সিলেটে কর্মসংস্থানের কোনো বাস্তব সুযোগ নেই। হয় তাকে ঢাকায় বা চট্টগ্রামে যেতে হয়, নয়তো বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। শেষ পর্যন্ত একসময় সে দেশ ছাড়ে।
তিনি বলেন, মেয়েদের অবস্থা আরও কঠিন। বাবা-মা তাদের দূরে পাঠাতে চান না চাকরির জন্য, ফলে অনেকে বিয়েকেই শেষ গন্তব্য ভাবছেন। ২৫–৩০ লাখ মানুষের এই শহরে কর্মসংস্থানের অভাব ভয়াবহ। আমরা সরকারে গেলে সিলেটকে কর্মসংস্থানের হাব হিসেবে গড়ে তুলব। সরকারি নীতিসহায়তা দিয়ে বিনিয়োগকারী আনব।
মুক্তাদির বলেন, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত দুই শ্রেণির মানুষের জন্যই কাজের সুযোগ সৃষ্টি করব। পাশাপাশি সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পর্যটন খাতে কাজে লাগাতে হবে। চট্টগ্রামের পাহাড় বাদ দিলে সিলেটের সমতুল্য জায়গা বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, এখানে পর্যটকের জন্য আরামদায়ক অবকাঠামো নেই। আমরা প্রথমে দেশি, পরে বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাই। একজন পর্যটক যদি ১০০ ডলার খরচ করে, সেটাই সিলেটের অর্থনীতির অংশ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা উৎপাদনমুখী শিল্প, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এতে বড় কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যদিও এর সুফল পেতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
যুব সমাজের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যুবকদের কৃষির সঙ্গে যুক্ত করতে চাই—কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষিতে। গ্রিন হাউজ প্রযুক্তি ও টেকভিত্তিক মাছ চাষে (টেকভেইজড ফিশারিজ) আমরা প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের উদ্যোগ নেব।
এ ছাড়া তিনি বলেন, সিলেটে যত আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে, তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হবে। আমাদের চতুর্থ অগ্রাধিকার হলো আইটি–ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান।
সিলেটের সমস্যার প্রসঙ্গে খন্দকার মুক্তাদির বলেন, জলাবদ্ধতা এখন সিলেটের সবচেয়ে বড় নগর সমস্যা। বৃষ্টি হলে অনেক এলাকা পানিতে ডুবে যায়। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে আগামী এক দশকে কিছু এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান করব।
তিনি আরও বলেন, নদীভাঙন সিলেটের আরেক বড় সমস্যা। বর্ষায় সুরমা নদীর তীরে অনেক স্থাপনা ভেঙে যায়। আমরা নদীভাঙন রোধে বাড়তি বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করব।
মাদক ও জুয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, নগরীর শ্রমজীবী মানুষের একটি অংশ অনলাইন জুয়া বা তীর খেলায় আসক্ত। আমরা সিলেটকে অনলাইন জুয়ার নেশা থেকে মুক্ত করতে চাই। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের আগেই আমি তাদের সতর্ক করছি—মাদক ছাড়ো, না হলে সিলেট ছাড়ো। হয় তারা থাকবে, নয় আমরা থাকব।
আইটি ল্যাব সলিউশন্স লি.